অচেনা বাঙলা

বাংলা ভাষা (ফেব্রুয়ারী ২০১৩)

মিনহাজুর রহমান জয়
  • ১৯
  • ৪২
‘দশ মিনিটের মধ্যে আমি তোমার রেজিগনেশন চাই’ বলে চেঁচিয়ে স্টাফ রিপোর্টার আহমেদ কবিরকে কেবিন থেকে বের হয়ে যেতে বললেন চ্যানেলের এমডি হাসিবুর রহমান সাহেব।

ফেব্রুয়ারি মাসে ‘মাতৃভাষা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নিজের বিশ্বস্ত কর্মচারী কবিরকে অর্পণ করেছিলেন চ্যানেলের এমডি হাসিব সাহেব। ফেব্রুয়ারির মাস তো সবসময় বাঙালীদের জন্য একটু অন্যরকম চেতনার। তাই ফেব্রয়ারি মাসে নিজ ভাষা নিয়ে প্রতিবেদন দেখালে চ্যানেলের জনপ্রিয়তা অনেক বেড়ে যাবে। আর এ কথা খুব ভালভাবেই বোঝেন হাসিব সাহেব।

ফেব্রুয়ারি মাসটা মূলত ভ্যালেন্টাইনস্ ডে আর একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়েই আলোচিত হয়। কয়েকদিন আগেই ভ্যালেন্টাইনস্ ডে নিমেষ হয়ে গেল। এখন সবার আকৃষ্টতা শুধু একুশে ফেব্রুয়ারিকে ঘিরে। দিন ও তেমন বেশি নেই। চ্যানেলের টি.আর.পি যেন কোনোদিকেই না কমে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে কবিরকে।

ক্যামেরাম্যানকে নিয়ে হাজির হয়ে গেল দেশ-বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সূর্যমুখী বিদ্যালয়ে। গত ছয় বছর যাবত এই প্রতিষ্ঠানটিই দেশের সব বোর্ড পরিক্ষায় শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। কয়েকটা পনের-ষোল বছর বয়সী ছেলে আর মেয়েকে ডেকে আনা হল নিচের সেন্ট্রাল হলে। প্রিন্সিপাল স্যার নিজেও এসে বলে গেলেন, ‘কোনোকিছুর প্রয়োজন হলে, এমদাদ স্যারকে বলে রেখেছি, তাকে ডাকবেন।’

২১শে ফেব্রুয়ারির আরও দুদিন বাকি থাকলেও অনুষ্ঠানটি ধারণ করা হবে আজকে। আর এই ধারণকৃত শো দেখানো হবে একুশে ফ্রেব্রুয়ারিতে টিভির পর্দায়।
দেখতে খুব গোলগাল চেহারার একটা ছেলেকে ডাক দিল কবির।
- তো বাবা, তোমার নামটা বল?
- আমার নাম সাকিব। আমি ৯ম শ্রেণীতে পড়ি (একদম নম্র সুরে জবাব)।
- এখন বল আজকে কয় তারিখ?
- আজকে একুশে ফেব্রুয়ারি (বিনম্রতার পুনরাবৃত্তি ঘটছে)।
- এই দিনটা এত মহান কেন?
- একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালীদের জীবনের এক গৌরবময় দিন। এই দিন ভাষা আন্দোলনে শহীদ হয়েছিলেন রফিক, জব্বার, সালাম আরও অনেকে। তাই এই দিনটা আমাদের কাছে অনেক মূল্যবান। আমরা এই দিনে আমরা খালি পায়ে শহীদ মিনারে গিয়ে ফুল দিই (ছোটবেলা থেকে বইয়ের প্রশ্নের উত্তর যা বলা হয়, ঠিক সেভাবেই জবাব দিল ছেলেটা)।

এই ছেলেটার পাশের চেয়ারেই আরও কয়েকসংখ্যক ছেলে আর মেয়ে বসে ছিল। আর একদম ডান পাশের একটা চেয়ারে বসেছিল কবির। এই গোলগাল আকৃতির ছেলেটির পাশেই আরেকটি ছেলে বসেছিল। তাকে উদ্দেশ্য করে কবিরের প্রশ্ন, ‘তুমি নি:সন্দেহে দেশের শ্রেষ্ঠ মেধার মাঝে একজন। তোমার কাছে আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আজকে কয় তারিখ?’
- স্যার, আজকে ২১শে ফেব্রুয়ারি। মহান আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস।
- হ্যা, তুমি ঠিক বলেছ। আজকে ২১শে ফেব্রুয়ারি। এই জবাবটি আমরা প্রাক্তনজনকেই জিজ্ঞেস করে পেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি এখনো আমার প্রশ্নের জবাব দিতে উত্তীর্ণ হওনি।
- স্যার, আমি বললাম তো আজকে একুশে ফেব্রুয়ারি (মুখে একটু বিরক্তির ভাব। অবশ্য একটি উত্তর বারবার দিতে কারোই পছন্দ হবে না)।
- তুমি তো বাঙালী জাতি। জন্মেছ এখানে। তো এই ফিরিঙ্গিদের দিন- তারিখ না বলে নিজের স্বাধীনতার দিন- তারিখ বল!
- স্যার, মানে....ইয়ে....য়ে...(বাঙলা বর্ষপঞ্জিকার কথা জিজ্ঞেস করায় আকাশ থেকে পড়া)।
- কি হল? বলতে পারছ না!

দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ মেধাবীদের বাঙলা তারিখ ও সন জানা নেই। স্কুলও ছোটবেলায় একটা বাংলা বারটা মাসের নাম মুখস্থ করায়। আর একটু প্রমোশন পেয়ে বড় কাসে উঠলেই গনিত, বায়োলজি আর একাউন্টিংয়ের সংগ্রাম। শুধুমাত্র নেপালে সরকারিভাবে বাংলা বর্ষপঞ্জিকা অনুসরণ করা হয়। আর অথচ আমরা এত যুদ্ধের পর এই মানচিত্র আর এই ভাষাকে পেয়েছি, কিন্তু আমাদের বর্ষপঞ্জিকা কবে আমাদের ভাষা থেকে হারিয়ে গেল তা আমরা নিজেরাও জানি না।
পাশের চেয়ারে একটা মেয়ে বসা। একটু চঞ্চল মনোভাবের মনে হচ্ছে। কবিরের প্রশ্ন এবার তার দিকে চলে গেল, ‘তুমি কি আমাদের একটু কষ্ট করে আমাদের বাংলা বার মাসের নাম শোনাবে?’
- বৈশাখ, জৈষ্ঠ্য, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, ......আশ্বিণ, ই.....য়ে....কার্তিক, চৈত্র, ইয়েয়য়য়য়..................য়ে (ধীরে ধীরে এখানেই থেমে গেল সে। আর খেয়াল নেই। থাকবেই বা কিভাবে। সেই সাত-আট বছর আগে স্কুলে পড়া। এতদিনে তো আমারও মনে নেই)।
সবাই একটু একটু করে বিব্রত বোধ করা শুরু করল। মনে হচ্ছে কোনো বে- আইনি কাজের মাঝখানে কোনো সাংবাদিক হানা দিয়েছে। ব্যাপারটা নিজেও অনুভব করতে পারল কবির। তাই সবার উদ্দেশ্যে সে বলল, ‘তোমাদের কাছে আমার শেষ প্রশ্ন। দেখি তো তোমরা বলতে পারো নাকি, আজকে কোন মাস?’
- কার্তিক (মাঝখান থেকে এক মেয়ে হাত উঠিয়ে বলে দিল)।
- ভাদ্র (বাম পাশের একদম কোণে বসা ছেলেটি জবাব দিল)।
- পহেলা বৈশাখ (গোলগাল আকৃতির ছেলেটি কহিল)।
তিনজনের একসাথে জবাবলগ্নেই কবির ক্যামেরাম্যানকে ‘প্যাক-আপ’ বলে শ্যুটিং শেষ করতে বলল। আর নিজের ক্যামেরা, মাইক্রোফোন এগুলো একটা ব্যাগে ভরে গাড়িতে উঠার প্রস্তুতি নেয়া চলছিল।

এমনস্থ এসে পড়লেন স্কুলের পিন্সিপাল স্যার। তিনি কথাগুলো ঠিক এভাবে কহিলেন, ‘দেশের সর্বশ্রেষ্ট প্রতিষ্ঠানের সর্বশ্রেষ্ঠ মেধাবীদের সাথে কথা বলে কেমন লাগল আপনার?’
- আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি এদের সাথে সাাত করতে পেরে। আসলেই দেখে খুশি হলাম আমাদের স্বাধীনতার অর্জনটুকু কতখানি রতি হয়েছে!

আজ একুশে ফেব্রুয়ারি। আজকে দেশের সব কারখানা- ফ্যাক্টরি বন্ধ থাকলেও চ্যানেলের কর্মীদের ছুটি নেই। একসময় কোনো এক রাজনীতিবীদের কাছ থেকে ফোন আসল। ফোনে কথা বললেন এমডি হাসিব সাহেব। আর সাথে সাথে কবিরকে ডেকে চেচিয়ে বলা, ‘এগুলো কি করেছ তুমি! তোমাকে সেখানে বাচ্চাদের সাথে বাংলার স্বাধীনতা আর ভাষা নিয়ে কথা বলতে পাঠানো হয়েছিল। আর তুমি এগুলো কি প্রেজেন্টেশন বানিয়েছ!। সেই স্কুলের প্রিন্সিপাল স্যারের বড় ভাই এখানের স্থানীয় রাজনৈতিক দলের সভাপতি। তিনি আমাকে বলেছেন এই অনুষ্ঠানটি টিভিতে সম্প্রচার করলে নাকি আমার চ্যানেল বন্ধ করে দিবে। আউট। গেটট লস্টটট। ইউ আর ফায়ারর্ড। দশ মিনিটের মধ্যে আমি তোমার রেজিগনেশন চাই।’

মিনিট বাদেই কবির একটি সাদা কাগজে নিজের রিজাইনিং লেটার নিয়ে এমডি স্যারের রুমে প্রবেশ করল। লেটারটি এমডি স্যারের হাতে দিতেই স্যার আবার বকা শুরু করলেন, ‘রিজাইনিং লেটারে কখনো কেউ বাংলা বছরের তারিখ লেখে! গাধা!! তুমি আসলেই একটা গাধা!!!’
এমডি স্যারের বকাগুলো শুনে কবিরের মনটা কেন যেন মুচকি মুচকি হাসছিল!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Lutful Bari Panna মজা পাইলাম জয়।
ভালো লাগেনি ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
বশির আহমেদ মনদিয়ে গল্পটা পড়লাম । অনেক শীক্ষনীয় । আমরা সবাই কেবল ফেব্রুয়ারী এলেই বাংলা ভাষা নিয়ে উঠেপরে লাগি মাস চরে যায যেই সেই । বাংলা মাস বাংলা সন তারিখ নিয়ে আমরা শিক্ষিত জন কতটুকু ভাবি ? বাংলা মাস সন তারিখ এখনো গ্রামের সাধারন কৃষক গ্রাম্য বধুরাই মনে রাখে । ভাষার জন্য বাংলা সনের জন্য তারাই ধন্যবাদ পাবার যোগ্য । বাস্তব ধর্মী গল্পের জন্য ধন্যবাদ ।
ভালো লাগেনি ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
জালাল উদ্দিন মুহম্মদ বেশ লিখেছো জয় । অসাধারণ বর্ণনায় বাস্তবতার ছোঁয়া । দারুণ লাগলো । ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো।
ভালো লাগেনি ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
ধন্যবাদ আপনাকে.
ভালো লাগেনি ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
শাহ আকরাম রিয়াদ গল্পটি ভাল লাগল, আসলে আমরা আমাদের ভাষা যথাযথ ভাবে ব্যবহার করছিনা।
ভালো লাগেনি ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
ধন্যবাদ আপনাকে.
ভালো লাগেনি ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
নিঃশব্দ যাত্রী আপনি এতো ভালো গল্প লিখেন কল্পনাই করা যায়না...
ভালো লাগেনি ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
ধন্যবাদ আপনাকে.
ভালো লাগেনি ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন ........এটাই হচ্ছে আমাদের দেশের প্রকৃত হাল। গল্পে ভাল ভাবে ফুটে উঠেছে। ভাল লাগল। শুভেচ্ছা রইল।
ভালো লাগেনি ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
ধন্যবাদ মো: ওয়াহিদ হোসেন।
ভালো লাগেনি ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
ভাইয়া অনেক সুন্দর হয়েছে ;
ভালো লাগেনি ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
জসীম উদ্দীন মুহম্মদ গল্পের অসাধারন আবেদন শৈলী আমাকে মুগ্ধ করল । অনেক ধন্যবাদ জয় তোমাকে ।
ভালো লাগেনি ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
ধন্যবাদ জনাব জসীম।
ভালো লাগেনি ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
মিলন বনিক সত্যিই অপূর্ব একটা গল্প....প্রকৃত সুন্দরের কাছে আমরা যেন কখনই মাথা নত না করি...খুব ভালো লাগলো....
ভালো লাগেনি ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
আহমেদ সাবের বেশ চমৎকার গল্প। আমাদের দেশের অসুস্থ পরিবেশে কবিরের মতো মানুষেরা অচল। " প্রিন্সিপাল স্যারের বড় ভাই" রা আমাদের দেশকে কোথায় নিয়ে যাবে কে জানে! বাস্তবনিষ্ঠ গল্পটা বেশ ভালো লাগলো।
ভালো লাগেনি ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
ধন্যবাদ স্যার. আমি আপনার ক্রসফায়ার বইটি পরেছিলাম. বেশ ভালো লিখেছিলেন.
ভালো লাগেনি ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
আজিম হোসেন আকাশ বেশ হয়েছে। ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩
ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৩

১৬ আগষ্ট - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪